বন্ধুরা, আমরা এইলেখায় আপনাদে জানাব এইচএমপিভি ভাইরাসের লক্ষণ কিভাবে ছড়ায় এই বিষয়ে। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর মানুষের জীবনে এক নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। এবার নতুন একটি ভাইরাসের কথা সামনে এসেছে, যার নাম হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা সংক্ষেপে এইচএমপিভি (HMPV)। চীনে সম্প্রতি এই ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর এ নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। যদিও চীন সরকারের পক্ষ থেকে এই ভাইরাসের প্রভাবকে নাকচ করা হয়েছে, কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশগুলো এবং বাংলাদেশেও এই ভাইরাস নিয়ে সতর্কতা বাড়ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে এই ভাইরাসের কয়েকজন রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে।
এইচএমপিভি ভাইরাস (HMPV)
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) জানায়, ২০০১ সালে প্রথম এইচএমপিভি ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। তবে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই ভাইরাসের অস্তিত্ব হয়তো আরও আগেই পৃথিবীতে ছিল। এটি প্রধানত শ্বাসতন্ত্রে আক্রমণ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস করোনার মতো বিপজ্জনক নয়। কিন্তু এটি যাতে দ্রুত না ছড়ায়, সে জন্য সতর্ক থাকা জরুরি। চীন কিংবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এখনো এ নিয়ে কোনো বিশেষ সতর্কতা জারি করেনি। তবু বিশেষজ্ঞরা সচেতনতার পরামর্শ দিয়েছেন।
এইচএমপিভি ভাইরাসের লক্ষণ কিভাবে ছড়ায়
এইচএমপিভি সংক্রমণ সাধারণত মানুষের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এই ভাইরাস খুব সহজেই শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত স্থান স্পর্শ করা এবং তারপর হাত দিয়ে মুখ, নাক বা চোখে স্পর্শ করাও ঝুঁকিপূর্ণ। এটি বিশেষত শীতের সময়ে বেশি ছড়ায়, কারণ তখন মানুষ বেশিরভাগ সময় ঘরের ভেতরে অবস্থান করে। ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়ার কারণগুলো করোনার মতোই হওয়ায় সাবধানতা মেনে চলা সহজ হবে।
এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শরীরে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। লক্ষণগুলো প্রথমে সাধারণ সর্দি-কাশির মতো মনে হতে পারে। তবে সময়ের সঙ্গে এটি গুরুতর হতে পারে।
১. সর্দি
২. কাশি
৩. জ্বর
৪. মাথাব্যথা
৫. শ্বাসকষ্ট
৬. কখনো কখনো ত্বক শুষ্ক বা হ্রাসপ্রাপ্ত হতে পারে।
যদি এই লক্ষণগুলোর যেকোনোটি দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। শ্বাসকষ্ট বেশি হলে ইনহেলার বা নেবুলাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যে সমস্ত সতর্কতা মেনে চলা হয়েছিল, এইচএমপিভি প্রতিরোধে সেগুলোই কার্যকর হতে পারে। এই ভাইরাস যাতে না ছড়ায়, সে জন্য ব্যক্তিগত ও সামাজিক সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ।
বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং হাত পরিষ্কার রাখা একটি কার্যকর পদ্ধতি। যেখানে-সেখানে হাত দিয়ে নাক, মুখ বা চোখ স্পর্শ না করাই ভালো। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
অন্যদিকে জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা একান্ত জরুরি। সর্দি বা কাশি হলে টিস্যু ব্যবহার করুন, আর তা সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দিন। টিস্যু না থাকলে কনুই ভাঁজ করে মুখ ঢেকে হাঁচি বা কাশি দিন। এতে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি অনেক কমে।
খাদ্যাভ্যাস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে
এইচএমপিভি প্রতিরোধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত। পর্যাপ্ত পানি পান করুন, যাতে শরীর হাইড্রেটেড থাকে।
জ্বর বা শ্বাসকষ্ট হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ না করাই ভালো।
যদিও এইচএমপিভি এখনো করোনার মতো বিপজ্জনক হয়ে ওঠেনি, তবুও এ নিয়ে যথেষ্ট সচেতন থাকা প্রয়োজন। সংক্রমণের হার কমাতে হলে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়েরই দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই ভাইরাসের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।
এমন পরিস্থিতিতে আমাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক ব্যবহার, নিয়মিত হাত ধোয়া, এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা—এসব অভ্যাস আমাদের সুরক্ষিত রাখতে পারে। একই সঙ্গে ভাইরাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন এবং গুজবে কান না দিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলুন।
আমার শেষ কথা
এইচএমপিভি ভাইরাস হয়তো এখনো বিশ্বের জন্য মহামারির মতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়নি, তবে সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে এটি ভয়াবহ হতে পারে। তাই শুরু থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। আমাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য সচেতন হতে হবে এবং পরিবারের সদস্যদেরও এ বিষয়ে অবগত করতে হবে।
সঠিক তথ্য, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, এবং চিকিৎসকের পরামর্শই হতে পারে এই ভাইরাস প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, তবে সচেতনতা ও সতর্কতা মেনে চললে এই ভাইরাস মোকাবিলা করা সম্ভব। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাধারণজ্ঞান ক্যাটাগরি ঘুরে দেখুন আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবেন।
করোনার সময় সবাইকে সতর্ক করেছি যে মাক্স খোলা যাবে না। কারন করোনা ইভলভ হচ্ছে। এইতো HMPV আসলো। আরোও ভাইরাস ইভলব হবে। তাই করোনা কালীনের মত স্বাস্থ্য সচেতনতা থাকতে হবে।