এই ভাবসম্প্রসারণ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত লেখাটি আপনাদের জন্য সহজ করে লিখে দিয়েছি। শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদণ্ড, কারণ শিক্ষা ছাড়া কোনো দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবে শুধু স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করলেই কেউ প্রকৃত শিক্ষিত হয় না। প্রকৃত শিক্ষা মানে শুধু বইয়ের জ্ঞান নয়, বরং তা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর ক্ষমতা। একজন সুশিক্ষিত মানুষ শুধু জ্ঞান অর্জনই করেন না, সেই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে এবং সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এখানেই স্বশিক্ষার গুরুত্ব দেখা দেয়। স্বশিক্ষা মানে নিজের চেষ্টায় জ্ঞান অর্জন এবং তা জীবনে প্রয়োগ করা।
আমাদের সমাজে অনেকেই শিক্ষিত, কিন্তু তাদের আচরণে শিক্ষার ছাপ থাকে না। তারা অন্য মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন, অহংকার দেখান, বা ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝতে পারেন না। এরা প্রকৃত অর্থে শিক্ষিত নন। কারণ, প্রকৃত শিক্ষা মানুষকে শুধু জ্ঞানই দেয় না, বরং নৈতিকতা, মানবতা এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধও শেখায়। তাই শুধু ডিগ্রি অর্জন করলেই চলবে না, সেই শিক্ষাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে। তবেই একজন মানুষ প্রকৃত শিক্ষিত এবং স্বশিক্ষিত হতে পারবেন।
ভাবসম্প্রসারণ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত
মূলভাব:
শিক্ষা মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এটি মানুষকে প্রকৃত শিক্ষিত ও মননশীল করে তোলে। তবে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই যথেষ্ট নয়, ব্যক্তির নিজের চেষ্টা ও সাধনার মাধ্যমেই সে প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে পারে।
সম্প্রসারিত ভাব:
শিক্ষা মানুষের জীবনে আলোর মতো। এটি মানুষের চিন্তা-চেতনাকে প্রখর করে, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বোঝায় এবং তাকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। সাধারণভাবে আমরা শিক্ষা বলতে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া শিক্ষাকেই বুঝি। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষা শুধু এই প্রাতিষ্ঠানিক গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষকে ডিগ্রি বা সার্টিফিকেট দিতে পারে, কিন্তু সব সময় তা তাকে জ্ঞানী বা আলোকিত মানুষ করে তুলতে পারে না। অনেক সময় দেখা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা বুদ্ধি-বিবেকহীন আচরণ করেন, যা সাধারণ মানুষের চেয়েও নিচু স্তরের হয়ে থাকে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রকৃতি, পরিবেশ এবং জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়াও জরুরি। এই শিক্ষা অর্জনের জন্য প্রয়োজন ব্যক্তির নিজের ইচ্ছা, প্রচেষ্টা এবং নিরলস পরিশ্রম। প্রকৃতি ও পরিবেশ থেকে শিক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে মানুষ তার বুদ্ধি-বিবেককে কাজে লাগাতে শেখে। এভাবে সে নিজেকে সুশিক্ষিত করে তুলতে পারে।
বর্তমান সময়ে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মূলত প্রাতিষ্ঠানিক। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় পরীক্ষায় পাস করা বা ডিগ্রি অর্জন করা যায়, কিন্তু তা দিয়ে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করা যায় না। এই শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত চাকরি বা জীবিকা অর্জনের জন্য তৈরি। তাই শুধু ডিগ্রি অর্জন করলেই কেউ সুশিক্ষিত হয় না। আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেয়েও জীবন সংগ্রাম, প্রকৃতি এবং পরিবেশ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন। তাদের জ্ঞান, দর্শন এবং আচরণ মানুষকে মুগ্ধ করে। তারা তাদের জ্ঞানের আলো দিয়ে সমাজকে আলোকিত করেন।
সুশিক্ষিত মানুষ শুধু বইয়ের জ্ঞান নয়, বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেও শেখেন। তাদের মন কুসংস্কারমুক্ত এবং মুক্তবুদ্ধির আলোয় উদ্ভাসিত। তারা পরিশীলিত, রুচিশীল এবং উদার মনের অধিকারী। এই গুণগুলো তারা নিজের চেষ্টা ও সাধনার মাধ্যমে অর্জন করেন।
মন্তব্য:
সুশিক্ষিত হওয়ার জন্য শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই যথেষ্ট নয়। প্রকৃতি, পরিবেশ এবং জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ। নিজের চেষ্টা ও সাধনার মাধ্যমেই মানুষ প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে পারে। সুশিক্ষিত ব্যক্তিরা সমাজকে আলোকিত করেন এবং তাদের জ্ঞান ও আচরণে সবাইকে মুগ্ধ করেন। তাই আমাদের উচিত শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য নয়, জ্ঞানার্জনের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করা।