পহেলা বৈশাখ অনুচ্ছেদ for Class 7
বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সার্বজনীন উৎসব। এটি ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সকল বাঙালির হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। বাংলা সনের প্রথম মাস বৈশাখের প্রথম দিনটিকে ‘পহেলা বৈশাখ’ নামে অভিহিত করা হয়। এই দিনে বাঙালিরা পুরোনো বছরের দুঃখ-কষ্ট ভুলে নতুন বছরের স্বপ্ন ও আশা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেয়। বাংলা নববর্ষের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। মূলত কৃষকদের সুবিধার জন্য এই সন চালু করা হয়, যাতে তারা নির্দিষ্ট সময়ে ফসল বিক্রি করে খাজনা পরিশোধ করতে পারে। নববর্ষের দিন জমিদাররা ‘পুণ্যাহ’ নামে একটি উৎসবের আয়োজন করতেন, যা এখন বিলুপ্ত। তবে ‘হালখাতা’ প্রথা এখনো টিকে আছে, যেখানে ব্যবসায়ীরা নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং নতুন হিসাবের বই খোলেন।
পহেলা বৈশাখের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো বৈশাখী মেলা। এই মেলা শহর ও গ্রামে সর্বত্রই আয়োজিত হয়। ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা এই দিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় আয়োজন। মঙ্গল শোভাযাত্রা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, ২০১৬ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দিয়েছে। গ্রামাঞ্চলে যাত্রাপালা, কবিগান, গম্ভীরা, কীর্তন, পুতুলনাচ এবং নাগরদোলার মতো ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানগুলো নববর্ষের আমেজকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব রীতি ও সংস্কৃতি অনুযায়ী নববর্ষ উদযাপন করে, যা ‘বৈসাবি’ নামে পরিচিত।
পহেলা বৈশাখের দিন পান্তা ভাত এবং ইলিশ মাছ খাওয়ার রীতি বাঙালির সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই দিনে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ এবং নানা ধরনের ভর্তা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এটি শুধু খাবারের বিষয় নয়, বরং এটি বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতীক।
বাংলা নববর্ষ শুধু একটি উৎসব নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জাতিসত্তার পরিচয় বহন করে। এটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক, যেখানে সবাই একসঙ্গে মিলে-মিশে আনন্দ করে। এই উৎসব বাঙালির ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেয়। পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব, যা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে। এটি আমাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখতে এবং একসঙ্গে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা জোগায়।