বাংলাদেশে শিক্ষক প্রশিক্ষণ বা B.Ed (Bachelor of Education) কোর্স নিয়ে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি জারি করেছে। এই চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (টিটিসি), পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকার অনুমোদিত মাত্র ২৩টি বেসরকারি টিটি কলেজ থেকে বিএড সনদ পাওয়া শিক্ষকরা উচ্চতর স্কেল পাবেন। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষকদের ক্যারিয়ার এবং ভবিষ্যতের জন্য বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এর ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত অন্যান্য বেসরকারি বিএড কলেজের সনদধারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আজ আমি এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সরকারি অনুমোদিত ১৭ বিএড কলেজে ভর্তি ২০২৫ নোটিশ
কলেজের নাম | ঠিকানা | যোগাযোগ নম্বর | ইমেইল |
---|---|---|---|
হাজী ওয়াজেদ আলী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ | সাতক্ষীরা | 01712976689 | hwattc@gmail.com |
মহানগর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ | আজিমপুর, ঢাকা | 01556321525, 01786088555 | mahanagarttcollege@gmail.com |
আমিরুল ইসলাম কাগজী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ | পাইকগাছা, খুলনা | 01923105329, 01720515325 | aikttcollege@gmail.com |
হাজীগঞ্জ আইডিয়াল কলেজ অব এডুকেশন | চাঁদপুর | 01814385191, 01713039743 | hicehajigonj@gmail.com |
পিরোজপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ | পিরোজপুর | 01720621733 | pttc1223@gmail.com |
কলেজ অব এডুকেশন বি.এড | বরিশাল | 01717388625 | bced1139@gmail.com |
মুন্সী মেহেরুউল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ | যশোর | 01711-423592 | mmttc2002@gmail.com |
জয়পুরহাট বি.এড কলেজ | জয়পুরহাট | 01736-204413 | joybedcollege@gmail.com |
মঠবাড়িয়া টিচার্স ট্রেনিং কলেজ | মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর | 01714-729613 | munsurahmed1960@gmail.com |
বগুড়া বি.এড কলেজ | বগুড়া | 01711-363528 | bedBogura2748@gmail.com |
দক্ষিণ বঙ্গ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ | পটুয়াখালী | 01712-044545, 01771039575 | dttcpatuakhali@yahoo.com |
কক্সবাজার টিচার্স ট্রেনিং কলেজ | কক্সবাজার | 01819014546 | coxcttc@gmail.com |
পরশ পাথর শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ | সিপিজেড, চট্টগ্রাম | 01711146925 | ppttc4394@gmail.com |
ড. মিয়া আব্বাস উদ্দীন টি.টি কলেজ | মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট | 01714-573600 | – |
শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ | পালবাড়ী, যশোর | 01716-319726 | mokbulhossen1977@gmail.com |
উপশহর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ | যশোর | 01712311326 | – |
মাগুরা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ | মাগুরা | 01719730650 | – |
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গত ২১ জানুয়ারির চিঠিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল মামলা নং ৯৯/২০১৪ এবং কনটেম্পট পিটিশন নং ১৫৩/২০১৪ এর রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই রায়ে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র সরকার অনুমোদিত ২৩টি বেসরকারি বিএড কলেজ থেকে সনদ পাওয়া শিক্ষকরাই উচ্চতর স্কেল পাওয়ার যোগ্য। এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পত্রে এই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন আবারও এই ২৩টি কলেজের তালিকা প্রকাশ করে নতুন করে পত্র জারির প্রয়োজন হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এই চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যদি এই নির্দেশনা না মানা হয়, তাহলে অন্যান্য বেসরকারি কলেজের বিএড সনদের ভিত্তিতে বিল প্রদান করা হলে সরকারি কোষাগারের টাকা নষ্ট হবে। এমনকি এটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে যারা উপরের তালিকাভুক্ত ২৩টি কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি নিয়েছেন, তাদের জন্য সুখবর। তারা সরকারি চাকরিতে উচ্চতর স্কেল পাবেন। কিন্তু যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত অন্যান্য বেসরকারি কলেজ থেকে বিএড করেছেন, তাদের মনে এখন অনেক প্রশ্ন। তাদের সনদ কি বৈধ হবে? তারা কি স্কেল পাবেন? এই অনিশ্চয়তা তাদের ক্যারিয়ারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমার এক বন্ধু, যিনি একটি বেসরকারি কলেজ থেকে বিএড করেছেন, বলছিলেন, “আমরা অনেক পরিশ্রম করে পড়াশোনা করেছি। এখন যদি আমাদের সনদের কোনো মূল্য না থাকে, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে?” এই প্রশ্ন শুধু তার একার নয়, বরং হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মনে ঘুরছে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে আইনি ও প্রশাসনিক কারণ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, শুধুমাত্র সরকার অনুমোদিত কলেজগুলোর সনদই গ্রহণযোগ্য। এর আগে অনেক বেসরকারি কলেজ থেকে বিএড সনদধারীরা স্কেল পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু আদালতের রায়ের পর এটি বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এই নিয়ম না মানলে সরকারি টাকার অপচয় হবে। তাই তারা এই ২৩টি কলেজের তালিকা প্রকাশ করেছে।
এই সিদ্ধান্তের আরেকটি কারণ হলো শিক্ষার মান নিশ্চিত করা। সরকার মনে করে, অনুমোদিত কলেজগুলোতে শিক্ষার মান ভালো। তবে অনেকে বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত অন্যান্য কলেজের শিক্ষার মানও কম নয়। তাহলে কেন তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে?
শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানের উপর যা প্রভাব পড়বে
এই চিঠির ফলে ১৭টি বিএড কলেজে ভর্তি চলছে বলে জানা গেছে। তবে শুধুমাত্র উপরের তালিকার কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরাই সুবিধা পাবেন। অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা এখন দ্বিধায় আছেন। অনেকে ভর্তি হওয়ার আগে দুবার ভাবছেন। কারণ, ভুল কলেজে ভর্তি হলে তাদের সনদের কোনো মূল্য থাকবে না।
প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও এটি চ্যালেঞ্জ। যেসব কলেজ তালিকায় নেই, তাদের শিক্ষার্থী কমে যেতে পারে। ফলে তাদের আর্থিক ক্ষতি হবে। একজন কলেজ প্রিন্সিপাল আমাকে বললেন, “আমাদের কলেজে অনেক ভালো শিক্ষক আছেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে।”
এই সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, সরকারের উচিত অন্যান্য বেসরকারি কলেজের শিক্ষার মান যাচাই করা। যদি তাদের মান ভালো হয়, তাহলে তাদেরও তালিকায় যুক্ত করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, যারা ইতিমধ্যে বিএড করেছেন, তাদের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তৃতীয়ত, শিক্ষার্থীদের সঠিক তথ্য দেওয়ার জন্য একটি সচেতনতা কার্যক্রম চালানো দরকার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষকদের জন্য একদিকে সুযোগ, অন্যদিকে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ২৩টি বেসরকারি বিএড কলেজ থেকে সনদ পাওয়া শিক্ষকদের জন্য এটি ভালো খবর। কিন্তু অন্যদের জন্য এটি অনিশ্চয়তা নিয়ে এসেছে। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য এমন সিদ্ধান্ত দরকার। তবে এটি যেন সব শিক্ষার্থীর জন্য ন্যায্য হয়, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, শিক্ষা সম্পর্কিত সকল তথ্যের আপডেট পেতে শিক্ষা নিউজকে ফলো করুন এবং শিক্ষা নিউজের ইউটিউব চ্যানেলকে সাবস্ক্রাইব করুন।