শিক্ষা ছাড়া মানুষ পশুর মতো, কারণ একজন শিক্ষিত মানুষ আপনার উপকার না করলেও সে জেনে-বুঝে কখনও ক্ষতি করবে না। অন্যদিকে, অশিক্ষিত বা জ্ঞানহীন মানুষ তার অজ্ঞতার কারণে অন্যের ক্ষতি করতে পারে। এজন্যই বলা হয়, শিক্ষা ছাড়া মানুষ পশুর সমান। শিক্ষা হলো জাতির মেরুদণ্ড, আর নিরক্ষরতা জাতির জন্য একপ্রকার অভিশাপ। কোনো দেশ বা জাতি তখনই উন্নতি করতে পারে, যখন সেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী হয়। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি কখনও সামনে এগোতে পারে না। শিক্ষিত মানুষই পারে একটি দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করে গড়ে তুলতে। তারা সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং অন্ধকারকে আলোয় পরিণত করে। আজকের এই লেখায় আমরা জ্ঞানহীন মানুষকে পশুর সাথে তুলনা করার কারণ বুঝতে চেষ্টা করব। শিক্ষা শুধু ব্যক্তিগত উন্নয়নই নয়, এটি সমাজ ও দেশের উন্নতির চাবিকাঠি। তাই আমাদের উচিত শিক্ষার গুরুত্ব বুঝে তা অর্জনের চেষ্টা করা।
জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: জ্ঞান বা শিক্ষাই হলো মানবজীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এটি মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে এবং বিশেষ মর্যাদা দেয়। জ্ঞানের মাধ্যমেই মানুষ সম্মান ও মনুষ্যত্ব অর্জন করে।
সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী যার বিবেক ও বুদ্ধি আছে। এই বিবেক-বুদ্ধিই মানুষকে জ্ঞান অর্জনের পথ দেখায়। জ্ঞানের আলো মানুষের মন ও হৃদয়কে আলোকিত করে। এই আলোয় মানুষ তার জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে। বাইরে থেকে দেখলে মানুষ ও পশু-পাখির মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু জ্ঞানই মানুষকে পশু-পাখি থেকে আলাদা করে। এই জ্ঞান অর্জন করতে মানুষের অনেক পরিশ্রম ও সাধনা প্রয়োজন। পশু-পাখিরা জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করে না, তাদের তেমন প্রয়োজনও নেই। তাই বলা হয়, পশু-পাখি জন্মগতভাবেই পশু-পাখি, কিন্তু মানুষকে তার মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। আর এই মনুষ্যত্ব অর্জনের একমাত্র উপায় হলো জ্ঞান সাধনা।
জ্ঞানই মানুষকে পশুত্ব থেকে মনুষ্যত্বের স্তরে উন্নীত করে। যতক্ষণ না মানুষের মধ্যে মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটে, ততক্ষণ তার আচরণে মহত্ত্ব ফুটে ওঠে না। মানবিক বিকাশ ঘটলে মানুষের বিবেক জাগ্রত হয়। তখন সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে এবং অন্যের কল্যাণ চিন্তা করে। অন্যদিকে, জ্ঞান না থাকলে মানুষের মেধার বিকাশ ঘটে না। মেধার বিকাশ না ঘটলে মানুষের স্বাভাবিক বুদ্ধি লোপ পায়। ফলে তার আচরণ পশুর মতো হয়ে যায়। জ্ঞানী ব্যক্তিরা সবসময় জ্ঞানচর্চা করেন এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য নিরন্তর চেষ্টা করেন।
ইসলাম ধর্মের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “জ্ঞান অর্জন করতে যদি চীন দেশেও যেতে হয়, তাহলে সেখানেই যাও।” এই বাণী থেকে বোঝা যায়, জ্ঞান কতটা গুরুত্বপূর্ণ। জ্ঞান ছাড়া মানুষ আত্মনির্ভরশীল হতে পারে না। জ্ঞানহীন মানুষ নিজের ভালো-মন্দও বুঝতে পারে না। তারা শুধু নিজের ইচ্ছা ও প্রবৃত্তির দাস হয়ে থাকে। সত্য, সুন্দর ও কল্যাণকর কাজ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তারা সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়ায় এবং পশুর চেয়েও নিচু স্তরে পড়ে যায়।
জ্ঞানহীন মানুষের জীবন নিয়ম-শৃঙ্খলাহীন। তাদের মধ্যে বিবেক-বুদ্ধির অভাব থাকে। তারা শুধু নিজের প্রয়োজনে ব্যস্ত থাকে, অন্যের কথা চিন্তা করে না। তাদের আচরণ পশুর মতোই হয়ে যায়। পশুরা প্রকৃতির নিয়মে চলে, কিন্তু মানুষের মধ্যে বিবেক ও বুদ্ধি থাকার কারণে তাদের আচরণ আরও উন্নত হওয়া উচিত। জ্ঞানহীন মানুষ এই বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে, ফলে তারা পশুর সমান হয়ে যায়।
মন্তব্য: জ্ঞানহীন মানুষ ও পশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। জ্ঞানই মানুষকে প্রকৃত মানুষ করে তোলে। জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে মানুষ তার মনুষ্যত্ব প্রমাণ করে। তাই জ্ঞানচর্চা করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। জ্ঞান ছাড়া মানুষ পশুর মতোই অন্ধকারে হাঁটে, কিন্তু জ্ঞানের আলোয় তার জীবন আলোকিত হয়।
জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান ভাবসম্প্রসারণ ছোট করে
মূলভাব:
জ্ঞানের আসল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ সৃষ্টি করা। এটি মানুষের বিবেক জাগ্রত করে, যাতে সে সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে। প্রকৃত জ্ঞান ছাড়া মানুষকে পরিপূর্ণ মানুষ বলা যায় না।
সম্প্রসারিত ভাব:
জ্ঞান মানুষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুণ। এটি মানুষকে অন্যান্য জীব থেকে পৃথক করেছে এবং তাকে চিন্তা ও বিশ্লেষণের ক্ষমতা দিয়েছে। জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা ও ভালো-মন্দের বিচার করতে পারে। প্রকৃত জ্ঞান শুধু তথ্য জানা নয়, বরং তা মানুষের চেতনার দ্বার খুলে দেয় এবং আত্মিক উন্নতি ঘটায়।
যার মধ্যে জ্ঞানের আলো নেই, সে সহজেই বিভ্রান্ত হয়। সে সঠিক পথের দিশা পায় না এবং অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অন্যদিকে, জ্ঞানী ব্যক্তি সবসময় যুক্তি ও ন্যায়ের আলোকে সিদ্ধান্ত নেন। তার বিবেক তাকে অন্যায় কাজ থেকে দূরে রাখে। এজন্য বলা হয়, প্রকৃত মানুষ হতে হলে জ্ঞান অর্জন অপরিহার্য।
জ্ঞানের কারণেই মানুষ আধুনিক সভ্যতার নির্মাতা হতে পেরেছে। এটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যারা জ্ঞানকে জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ করে, তারা উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। অপরদিকে, জ্ঞানহীন ব্যক্তি পশুসুলভ আচরণ করে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়।
মন্তব্য:
জ্ঞান ছাড়া মানবজীবন অসম্পূর্ণ। এটি মানুষকে শুধু উন্নতির পথে নিয়ে যায় না, বরং তার চারপাশের পৃথিবীকে আরও সুন্দর ও কল্যাণময় করে তোলে। তাই প্রকৃত মানুষ হতে চাইলে আমাদের জ্ঞানার্জন করা এবং তা সঠিকভাবে ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি।