শিক্ষা মন্ত্রণালয় গুচ্ছ ভর্তি ২০২৫ নিয়ে একটি নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই সিদ্ধান্ত গত কয়েকদিন ধরে চলমান শিক্ষার্থী আন্দোলনের পর নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা দাবি করছিলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হোক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের একটি দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা প্রথম চালু হয় ২০২১ সালে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ সুবিধাজনক প্রমাণিত হয়। ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি মাত্র ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারতেন।
তবে, সরকারের পরিবর্তনের পর থেকে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতি থেকে সরে আসতে শুরু করে। ২০২৪ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আলাদা ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করে। পরে আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় একই পথে হাঁটে। এ বছর (২০২৫) ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বেশ উদ্বেগে ছিলেন। আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষার কারণে তাদের জন্য কিছু জটিলতা তৈরি হচ্ছিল।
- মানবণ্টন: প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মানবণ্টন আলাদা হওয়ায় আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয়।
- খরচ বৃদ্ধি: আলাদা ফরম তুলতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আর্থিকভাবে চাপে পড়ছিলেন।
- যাতায়াত সমস্যা: প্রত্যন্ত এলাকা থেকে শহরে এসে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
এই কারণে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)-এর সামনে বিক্ষোভ করেন। আন্দোলনের সময় তারা ইউজিসি ভবনের প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে রাখেন।
গুচ্ছ ভর্তি ২০২৫ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা
গত সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের প্রতি একটি নির্দেশনা জারি করেছে।
- গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি বহাল রাখা।
- সব বিশ্ববিদ্যালয় যেন গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়।
- গুচ্ছ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের খরচ এবং সময় বাঁচানো নিশ্চিত করা।
যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এখনো অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানায়নি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে তাদের প্রাথমিক আবেদন কার্যক্রম শেষ করেছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) তাদের অনলাইন আবেদন কার্যক্রম চালাচ্ছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব ভর্তি কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল। তবে নতুন সিদ্ধান্তের ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবার গুচ্ছ পদ্ধতিতে ফিরে আসবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা | বর্ণনা |
---|---|
একটি মাত্র পরীক্ষা | শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষা দেওয়ার ঝামেলা কমে যায়। |
কম খরচ | একবার ফি দিয়ে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যায়। |
সময়ের সাশ্রয় | বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্রমণের প্রয়োজন হয় না। |
মানবণ্টনে সমন্বয় | একক পরীক্ষার মাধ্যমে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়। |
অসুবিধা | বর্ণনা |
---|---|
সবার অংশগ্রহণ না থাকা | কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতি মানতে চায় না। |
প্রস্তুতির জটিলতা | বিভিন্ন বিষয়ে একসাথে পরীক্ষা নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি কঠিন হয়। |
ফলাফল বিলম্বিত | গুচ্ছ পদ্ধতির ফলে ফল প্রকাশে দেরি হতে পারে। |
শিক্ষার্থীরা চান, গুচ্ছ পদ্ধতিতে সব বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করুক। এতে তাদের খরচ এবং সময় দুটোই কমবে। পাশাপাশি, একক মানবণ্টন থাকায় প্রস্তুতি নেওয়াও সহজ হবে।
গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনার মাধ্যমে গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠতে পারে। তবে এর সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর।
- সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি এই পদ্ধতিতে সম্মত হয়, তবে এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সুবিধা হবে।
- ডিজিটাল সমাধান: গুচ্ছ পদ্ধতি আরও সহজ করতে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করা প্রয়োজন।
- আন্তরিকতা: শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি যদি সমন্বিতভাবে কাজ করে, তবে এই পদ্ধতি আরও কার্যকর হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের মাঝে আশার আলো জেগেছে। গুচ্ছ পদ্ধতি পুনর্বহাল হলে শিক্ষার্থীদের ঝামেলা অনেকটাই কমবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত এবং কার্যকর বাস্তবায়ন এখনো বাকি। শিক্ষার্থীরা আশাবাদী যে, গুচ্ছ ভর্তি ২০২৫ একটি সফল অধ্যায় হিসেবে স্থান করে নেবে। ভর্তি ও আবেদন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।