পরিশ্রম ছাড়া সফলতা পাওয়া যায় না, এ কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু শুধু পরিশ্রম করলেই যে সফলতা আসবে, তা নয়। সঠিক দিকনির্দেশনা এবং লক্ষ্য ঠিক না থাকলে পরিশ্রমও বৃথা যেতে পারে। জীবনে সফল হতে হলে পরিশ্রমের পাশাপাশি প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা এবং ধৈর্য। কারণ, সফলতা রাতারাতি আসে না, এ জন্য সময় এবং অধ্যবসায় দুটোই দরকার।
পরিশ্রমকে বলা হয় সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। কিন্তু এই চাবিকাঠি তখনই কাজে লাগে যখন আমরা আমাদের লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখি। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগোলে একদিন বড় সফলতা ধরা দেয়। যেমন, একজন শিক্ষার্থী যদি নিয়মিত পড়াশোনা করে এবং তার লক্ষ্য ঠিক রাখে, তাহলে সে অবশ্যই ভালো ফলাফল করতে পারবে। আমি এই লেখায় পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ভাবসম্প্রসারণ, ভাবসম্প্রসারণ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি class 6 লিখেছি, যা আপনাদের জন্য সহায়ক হয়ে কাজ করবে। আপনি এটি নোট করে নিন খাতায়।
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ভাবসম্প্রসারণ
একটা কথা মনে রাখতে হবে, পরিশ্রমের ফল সব সময় তাড়াতাড়ি দেখা যায় না। অনেক সময় ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু যারা অধ্যবসায়ী হয়, তাদের জীবনে সফলতা একদিন না একদিন আসবেই। তাই পরিশ্রমের পথ থেকে কখনো পিছপা হওয়া যাবে না। সঠিক পরিকল্পনা এবং নিয়মিত চেষ্টা আপনাকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
মূলভাব
পরিশ্রমই জীবনের সফলতা ও কল্যাণের মূল চাবিকাঠি। পরিশ্রম ছাড়া কোনো মানুষ প্রকৃত সাফল্য অর্জন করতে পারে না। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই সৌভাগ্যের দ্বার উন্মোচিত হয়। সৌভাগ্য কখনোই আকাশ থেকে পড়ে না, এটাকে অর্জন করতে হয়। তাই বলা যায়, পরিশ্রমই সৌভাগ্যের মূল উৎস।
সম্প্রসারিতভাব
সৃষ্টিকর্তা মানুষকে শক্তি, বুদ্ধি ও মেধা দিয়েছেন পরিশ্রম করার জন্য। বিনা পরিশ্রমে কোনো কিছুই অর্জন করা যায় না। মেধা, বুদ্ধি ও কর্মক্ষমতা মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। এই গুণগুলোকে কাজে লাগিয়ে মানুষ তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। সৌভাগ্য কখনোই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসে না, এটাকে পরিশ্রম দিয়ে অর্জন করতে হয়। জীবনে সাফল্য পেতে হলে অলসতা ত্যাগ করে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যত মহান ব্যক্তি সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন, তাদের সবার জীবনের গল্পে একটি সাধারণ বিষয় রয়েছে কঠোর পরিশ্রম। সফলতার মূলমন্ত্রই হলো পরিশ্রম। ব্যক্তিগত জীবন হোক বা জাতীয় জীবন, সাফল্যের জন্য পরিশ্রম অপরিহার্য। পৃথিবীতে যেসব জাতি বেশি পরিশ্রমী, তারা তত বেশি উন্নত। এজন্যই পরিশ্রমকে সৌভাগ্যের চাবিকাঠি বলা হয়। অন্যদিকে, মেধা থাকলেও যদি কেউ তা কাজে লাগানোর চেষ্টা না করে, তাহলে তার জীবন দুর্ভাগ্যের অন্ধকারে ডুবে যায়। উদাহরণস্বরূপ, একজন ভালো ক্রিকেটার হতে চাইলে শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না, নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। ঠিক তেমনি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল হতে হলে পরিশ্রম ও সাধনা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।
পরিশ্রমের গুরুত্ব বোঝাতে একটি প্রচলিত কথা আছে—”হাত জোড় করে নয়, হাত মুঠো করে নয়, পেতে হলে হাত লাগাতে হবে।” মানুষের সৌভাগ্যের মূলেই রয়েছে তার পরিশ্রম। একজন পরিশ্রমী ব্যক্তিই প্রকৃত অর্থে ভাগ্যবান। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন ডাল্টনকে সবাই প্রতিভাবান বলে জানতেন, কিন্তু তিনি নিজেকে সবসময় একজন কঠোর পরিশ্রমী হিসেবে পরিচয় দিতেন। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে “Life is not a bed of roses” অর্থাৎ জীবন কখনোই গোলাপের শয্যা নয়। জীবনের প্রতিটি সাফল্য নির্ভর করে আমাদের কর্মের উপর।
ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছেন, “প্রতিভা বলে কিছু নেই। পরিশ্রম করো, তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।” অর্থাৎ, প্রতিভা শুধু পরিশ্রমের মাধ্যমেই বিকশিত হয়। নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেছেন, “অসম্ভব শব্দটি শুধু বোকাদের অভিধানে পাওয়া যায়।” এর মানে হলো, পরিশ্রম ও দৃঢ় সংকল্প থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
মন্তব্য
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সৃষ্টিকর্তা পরিশ্রমী মানুষদের সহায়তা করেন। তাই জীবনে সফল হতে হলে আমাদের অবশ্যই কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। পরিশ্রমই আমাদের সৌভাগ্যের পথ দেখাবে এবং সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দেবে। পরিশ্রমের মাধ্যমেই আমরা আমাদের ভাগ্য গড়ে তুলতে পারি। তাই আসুন, অলসতা ত্যাগ করে পরিশ্রমের পথে এগিয়ে যাই এবং সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহন করি।