শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি স্কুল ও কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অবসর সুবিধার তৃতীয় ধাপের টাকা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি)-এর মাধ্যমে ছাড়ের নির্দেশ দিয়েছে। এই ধাপে মোট ৮৪ হাজার ৭৭৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হবে। এর মধ্যে স্কুলের ৬৫ হাজার ৬৮৩ জন এবং কলেজের ১৯ হাজার ৯৩ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।
ইএফটিতে আরো ৮৪ হাজার শিক্ষকের এমপিও ছাড়ের নির্দেশ
সোমবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, এ সংক্রান্ত চিঠি চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসার-এর কাছে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর (স্কুল ও কলেজ) এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের আংশিক তৃতীয় লটের বেতন ও ভাতার সরকারি অংশ বাবদ ২১৪ কোটি ৭৪ লাখ ৬৫ হাজার ৭৯৯ টাকা বিভাজন অনুসারে ইএফটির মাধ্যমে পাঠানোর জন্য নির্দেশক্রমে সরকারি মঞ্জুরি করা হয়েছে।
চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসার এ বিভাজন অনুযায়ী ইএফটির মাধ্যমে টাকা দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তার কার্যালয় এই টাকা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর (স্কুল ও কলেজ) এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ও ভাতার সরকারি অংশ বাবদ পরিশোধ করবেন।
ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা প্রদানের গুরুত্ব
সরকারি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পান। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে ছাড় হলেও তা রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতে ছাড় হয়। এই অর্থ তুলতে শিক্ষকদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হতো। ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বেতন-ভাতা ছাড়ের জন্য কয়েক পর্যায়ে অনুমোদনসহ সংশ্লিষ্ট কাজে অনেক ক্ষেত্রেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পেতে দেরি হয়। অনেক সময় পরের মাসের ১০ তারিখের পরও আগের মাসের বেতন-ভাতা জোটে।
গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওর বেতন-ভাতা দেয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়। পরে গত ১ জানুয়ারি ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতার সরকারি অংশের টাকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে আরও ৬৭ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে বেতন ছাড় হয়।
বেসরকারি স্কুল-কলেজের ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ২ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য যাচাই করেছে মাউশি অধিদপ্তর। ২৭ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য পায়নি সংস্থাটি। অবশিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য পেলেও তাতে ত্রুটি থাকায় সেগুলো সংশোধন করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
ইএফটির সুবিধা
ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা প্রদানের ফলে শিক্ষক-কর্মচারীদের অনেক সুবিধা হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
১. দ্রুত টাকা পাওয়া: ইএফটির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ফলে শিক্ষকরা সময়মতো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।
২. ভোগান্তি কম: ব্যাংকে লাইন দিয়ে টাকা তুলতে হয় না, যা আগে শিক্ষকদের জন্য বড় একটি সমস্যা ছিল।
৩. স্বচ্ছতা: ইএফটির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ফলে বেতন-ভাতা বিতরণে স্বচ্ছতা বাড়ছে।
বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পাওয়ায় বেশ সন্তুষ্ট। তারা বলছেন, আগে বেতন পেতে অনেক সময় লেগে যেত, কিন্তু এখন সময়মতো বেতন পাওয়া যাচ্ছে। এতে তাদের আর্থিক সচ্ছলতা বাড়ছে এবং পরিবারের চাহিদা মেটানো সহজ হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী দিনগুলোতে সব বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য মাউশি অধিদপ্তর অবশিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য যাচাই ও সংশোধনের কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছে।
নিচের টেবিলে বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের তথ্য দেওয়া হলো:–
প্রতিষ্ঠানের ধরন | শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা | বরাদ্দকৃত টাকার পরিমাণ |
---|---|---|
স্কুল | ৬৫,৬৮৩ জন | ১৭০ কোটি টাকা |
কলেজ | ১৯,০৯৩ জন | ৪৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা |
মোট | ৮৪,৭৭৬ জন | ২১৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা |
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য একটি বড় সুখবর। ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা প্রদানের ফলে শিক্ষকরা এখন আর ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করছেন না। এতে তাদের কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ছে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছেন। আশা করা যায়, আগামী দিনগুলোতে সব শিক্ষক-কর্মচারীই ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পাবেন এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় আরো স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আসবে। MPO সম্পর্কিত এবং বেতন সম্পর্কিত যেকোনো তথ্যের জন্য আমাদের মূলপাতা ভিজিট করুন।