প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আজ তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি অধ্যবসায় রচনা Class 6। এই রচনাটি তোমাদের জীবনে খুবই কাজে লাগবে। কারণ, জীবনে কোনো কাজে সফলতা না পেলে, এই রচনাটি পড়ে তোমরা নতুন করে উৎসাহ পাবে। মনে হবে, অধ্যবসায়ই তোমাকে সফলতার দিকে নিয়ে যাবে। চলো, তাহলে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।
অধ্যবসায় হলো কোনো কাজে লেগে থাকা এবং কঠোর পরিশ্রম করা। এটি এমন একটি গুণ, যা মানুষকে জীবনে এগিয়ে নিয়ে যায়। অনেক সময় আমরা কোনো কাজে বারবার ব্যর্থ হই। তখন হতাশ হয়ে কাজ ছেড়ে দিই। কিন্তু যারা অধ্যবসায়ী, তারা কখনও হাল ছাড়ে না। তারা বারবার চেষ্টা করে এবং শেষ পর্যন্ত সফল হয়।
অধ্যবসায় রচনা Class 6
জীবনে সফল হতে হলে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবীর সব বড় বড় মানুষই তাদের অধ্যবসায়ের জোরেই সফল হয়েছেন। তারা কখনও ব্যর্থতায় ভেঙে পড়েননি। তাই তোমরাও যদি জীবনে সফল হতে চাও, তাহলে অধ্যবসায়ী হও। কোনো কাজে ব্যর্থ হলে হতাশ হবে না, বরং আরও বেশি চেষ্টা করবে। মনে রাখবে, অধ্যবসায়ই সফলতার চাবিকাঠি।
সূচনা
কেউই ব্যর্থ হতে চায় না। সবাই চায় সাফল্য পেতে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কেউই সব কাজে একবারেই সফল হয় না। সাফল্য পেতে হলে বারবার চেষ্টা করতে হয়। কোনো কাজে সফল হওয়ার জন্য এই অবিরাম চেষ্টার নামই হলো অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া জীবনে উন্নতি করা সম্ভব নয়। এটি মানব সভ্যতার অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি।
অধ্যবসায় কী
অধ্যবসায় শব্দের অর্থ হলো অবিরাম চেষ্টা বা নিরন্তর সাধনা। কোনো লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একাগ্রভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই হলো অধ্যবসায়। ব্যর্থতায় হতাশ না হয়ে, কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য ধরে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়াই এর মূল কথা। অধ্যবসায়ের সার্থকতা হলো, কোনো বাধা বা ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া।
অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা
ব্যর্থতা সাফল্যের প্রথম ধাপ। ব্যর্থতা থেকেই সাধনার শুরু হয়, আর সফলতা দিয়ে তার সমাপ্তি। তাই জীবনে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। অধ্যবসায়ী মানুষই পারে অসাধ্যকে সাধন করতে। এমনকি, অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই মানুষ পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করতে পারে। ইতিহাসে যারা সফল হয়েছেন, তারা সবাই অধ্যবসায়ের গুণে সাফল্য পেয়েছেন। তাই মানবজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এই সময়টাই হলো ভবিষ্যৎ গড়ার উপযুক্ত সময়। ছাত্রজীবনে যদি কেউ ব্যর্থ হয়, তাহলে তার পুরো জীবনই ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে। যে ছাত্র অধ্যবসায়ী, সাফল্য তার নিশ্চিত। অলস ছাত্র-ছাত্রী মেধাবী হলেও পড়াশোনায় সফল হতে পারে না। কারণ, কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায় ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা পাওয়া যায় না। ছাত্রজীবন থেকেই এই গুণটি গড়ে তুলতে হবে। একজন বিখ্যাত কবি কালীপ্রসন্ন ঘোষ বলেছেন,
“পারিব না একথাটি বলিও না আর,
কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার,
পার কি না পার কর যতন আবার।
একবার না পারিলে দেখ শতবার।”
এই কথাগুলো আমাদের শেখায় যে, কোনো কাজে একবার ব্যর্থ হলে হতাশ হওয়া উচিত নয়। বারবার চেষ্টা করলে অবশ্যই সফলতা পাওয়া যায়।
অধ্যবসায় ও প্রতিভা
অধ্যবসায় প্রতিভার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিখ্যাত দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছেন, “প্রতিভা বলে আসলে কিছু নেই। শুধু পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমেই সাফল্য পাওয়া যায়।” ডালটনও একই কথা বলেছেন, “লোকেরা আমাকে প্রতিভাবান বলে, কিন্তু আমি শুধু পরিশ্রম ছাড়া আর কিছু জানি না।” বিজ্ঞানী নিউটনও বলেছেন, “আমার আবিষ্কারগুলো প্রতিভার ফল নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা ও সাধনার ফল।” এই কথাগুলো থেকে বোঝা যায়, শুধু প্রতিভা থাকলেই সাফল্য আসে না। অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের মাধ্যমেই প্রতিভাকে কাজে লাগানো যায়। অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি তাদের অধ্যবসায়ের জোরেই নিজেদের কাজকে সফলভাবে সম্পন্ন করেন। আবার অনেকেই অধ্যবসায়ের মাধ্যমে প্রতিভাবান হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
অধ্যবসায়ের উদাহরণ
ইতিহাসে যেসব মহান ব্যক্তি সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন, তারা সবাই ছিলেন অধ্যবসায়ী। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস এবং ফ্রান্সের বিখ্যাত ঐতিহাসিক টমাস কার্লাইল অধ্যবসায়ের উজ্জ্বল উদাহরণ। রবার্ট ব্রুস ইংরেজদের বিরুদ্ধে একের পর এক পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ছয়বার পরাজিত হওয়ার পরও তিনি হাল ছাড়েননি। একদিন তিনি দেখলেন, একটি মাকড়সা বারবার কড়িকাঠে জাল বুনতে চেষ্টা করছে এবং ছয়বার ব্যর্থ হচ্ছে। সপ্তমবার চেষ্টায় মাকড়সাটি সফল হয়। এই ঘটনা থেকে রবার্ট ব্রুস অনুপ্রেরণা পেয়ে সপ্তমবার যুদ্ধে ইংরেজদের পরাজিত করেন এবং স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা অর্জন করেন।
অন্যদিকে, টমাস কার্লাইল তার লেখা “ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাস” বইয়ের পাণ্ডুলিপি এক বন্ধুকে পড়তে দিয়েছিলেন। কিন্তু বন্ধুর বাড়ির কাজের মহিলা সেই পাণ্ডুলিপিটিকে বাজে কাগজ ভেবে পুড়িয়ে ফেলেন। এই ঘটনায় কার্লাইল হতাশ না হয়ে আবার নতুন করে বইটি লিখেন। তার এই অধ্যবসায়ের ফলেই বইটি আজ বিশ্ববিখ্যাত।
সম্রাট নেপোলিয়ন, আব্রাহাম লিঙ্কন, ক্রিস্টোফার কলম্বাসের জীবনও অধ্যবসায়ের উজ্জ্বল উদাহরণ। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিরা তাদের অধ্যবসায়ের জোরেই বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কাজী নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবনও অধ্যবসায়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাদের জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি, অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই জীবনে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।
উপসংহার
অধ্যবসায় হলো জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি। এটি আমাদেরকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। জীবনে সাফল্য ও ব্যর্থতা দুটোই আসে। কিন্তু অধ্যবসায়ী মানুষ কখনোই ব্যর্থতায় থেমে থাকে না। তারা প্রতিটি ব্যর্থতাকে সাফল্যে পরিণত করার চেষ্টা করে। তাই বলা যায়, জীবনে সাফল্য পেতে হলে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। অধ্যবসায়ই হলো সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।