জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), যিনি দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম, তার ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে। গত রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই সুখবর জানিয়েছে। এই ফলাফলটি ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার জন্য। যারা এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন, তাদের জন্য এটি একটি বড় মুহূর্ত। আজ আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, যাতে সবাই সহজে বুঝতে পারে এবং পরবর্তী ধাপগুলো সম্পর্কে জানতে পারে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ইউনিটের রেজাল্ট ২০২৫
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা তাদের ফলাফল দেখতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে। এজন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নিজের লগইন পোর্টালে প্রবেশ করতে হবে। এটা খুবই সহজ একটি প্রক্রিয়া। আপনার রোল নম্বর আর পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করলেই ফলাফল চোখের সামনে চলে আসবে। তবে, যদি কারো কোনো সমস্যা হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্পলাইন বা অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। এই ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্নের প্রথম ধাপ পূরণ হয়েছে।
যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ আসছে। ০৮ এপ্রিল ২০২৫ থেকে ১৭ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ওয়েবসাইটে লগইন করে তাদের পছন্দের Subject Choice বা বিষয় নির্বাচন করতে পারবেন। এই সময়ের মধ্যে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোন বিষয়ে পড়তে চান। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই নির্বাচনই আপনার ভবিষ্যৎ শিক্ষা ও ক্যারিয়ারের দিক নির্ধারণ করবে। তাই, ভেবেচিন্তে এবং পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
আসন সংখ্যা ও শিফট ভিত্তিক বিস্তারিত
এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ‘এ’ ইউনিটের তিনটি শিফটে মোট আসন সংখ্যা ছিল ৮৬০টি। এটি বিজ্ঞান অনুষদের জন্য। আসনগুলোকে তিনটি শিফটে ভাগ করা হয়েছে।
শিফট | আসন সংখ্যা |
---|---|
প্রথম শিফট | ২৮৪টি |
দ্বিতীয় শিফট | ২৮৭টি |
তৃতীয় শিফট | ২৮৯টি |
মোট | ৮৬০টি |
এই তিন শিফটে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে যাতে সবাই সুষ্ঠুভাবে অংশ নিতে পারে। প্রতিটি শিফটে আসন সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি রাখা হয়েছে, যাতে কোনো শিক্ষার্থী বঞ্চিত না হয়। তবে, আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় প্রতিযোগিতা ছিল বেশ কঠিন। যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন, তারা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি বড় স্বপ্ন। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তার মানসম্মত শিক্ষা এবং ভালো শিক্ষকদের জন্য পরিচিত। ‘এ’ ইউনিট মূলত বিজ্ঞান অনুষদের জন্য, যেখানে পড়াশোনার বিষয়গুলো হচ্ছে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ইত্যাদি। এই বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী বা গবেষক হওয়ার পথ দেখায়। তাই, যারা এখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, তাদের জন্য এটি একটি সোনার সুযোগ।
ফলাফল প্রকাশের পর অনেক শিক্ষার্থী তাদের আনন্দ প্রকাশ করেছে। আমি কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। রাকিব নামে একজন শিক্ষার্থী বললেন, “আমি খুবই খুশি। অনেক পরিশ্রম করেছি, এখন তার ফল পেয়েছি। এখন আমি পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চাই।” আরেকজন শিক্ষার্থী সুমাইয়া বললেন, “পরীক্ষার সময় খুব টেনশন হচ্ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সব কষ্ট সার্থক হয়েছে।” এই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা যায়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে কতটা উৎসাহ আর আনন্দ কাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ও দায়িত্ব
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ভর্তি প্রক্রিয়াটি খুব সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছে। পরীক্ষা থেকে শুরু করে ফলাফল প্রকাশ, সবকিছুই স্বচ্ছভাবে করা হয়েছে। তবে, এখন তাদের আরেকটি বড় দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের Subject Choice দেওয়ার প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা বিষয় নির্বাচনে ভুল করে ফেলে, যা পরে তাদের জন্য সমস্যা হয়। তাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গাইডলাইন বা কাউন্সেলিং সেশনের ব্যবস্থা করা।
আপনি যদি এই ভর্তি প্রক্রিয়ার একজন অংশ হন, তাহলে কিছু পরামর্শ মেনে চলতে পারেন। প্রথমত, ওয়েবসাইটে নিয়মিত চোখ রাখুন। কারণ, যেকোনো নতুন আপডেট সেখানেই দেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, আপনার পছন্দের বিষয় নির্বাচনের আগে ভালোভাবে চিন্তা করুন। আপনি কী নিয়ে পড়তে চান, কোন বিষয়ে আপনার আগ্রহ বেশি, এটা বোঝার চেষ্টা করুন। তৃতীয়ত, সময়মতো সব ধাপ সম্পন্ন করুন। যেমন, ১৭ এপ্রিল ২০২৫ এর মধ্যে Subject Choice দিয়ে ফেলুন, না হলে সুযোগ হারাতে পারেন।
সমাজে এর প্রভাব
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, পুরো সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে পড়াশোনা করে অনেকে দেশের উন্নয়নে কাজ করছেন। বিজ্ঞান অনুষদ থেকে যারা পাস করবেন, তারা হয়তো ভবিষ্যতে নতুন আবিষ্কার করবেন বা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অবদান রাখবেন। তাই, এই ভর্তি প্রক্রিয়াটি কেবল শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, দেশের ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ একটি নতুন শুরুর সূচনা। যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের জন্য অভিনন্দন। আর যারা এবার সুযোগ পাননি, তাদের জন্য হতাশ হওয়ার কিছু নেই। পরিশ্রম করলে সুযোগ আবার আসবে। আগামী দিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা রইলো। এই ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আরো অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীকে তাদের স্বপ্নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।