প্রিয় পাঠক, আমি এই লেখায় আপনাদের জানার সুবিধার্থে বাংলায় আবেদনপত্র লেখার নিয়ম বিষয়ে এই প্রতিবেদনটি লিখেছি। দরখাস্ত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বিভিন্ন প্রয়োজনে, যেমন ছুটি, চাকরি, বা সরকারি সুবিধা পাওয়ার জন্য দরখাস্ত লিখতে হয়। তবে দরখাস্ত লেখার কিছু সাধারণ নিয়ম আছে, যা অনুসরণ করলে আবেদনটি সঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায়।
বাংলায় আবেদনপত্র লেখার নিয়ম
দরখাস্ত লেখার ধাপ:
১. তারিখ: প্রথমে বাম পাশে তারিখ লিখতে হবে।
২. প্রাপকের তথ্য: যার কাছে আবেদন করা হচ্ছে, তার পদবী এবং ঠিকানা সঠিকভাবে লিখুন।
৩. বিষয়: সংক্ষিপ্তভাবে আবেদনের বিষয় উল্লেখ করুন, যাতে প্রাপক সহজেই বুঝতে পারেন।
৪. সম্ভাষণ: “মহোদয়” বা “জনাব” এর মতো শব্দ দিয়ে সম্ভাষণ জানান।
৫. মূল বক্তব্য: সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্টভাবে আপনার আবেদনের কারণ লিখুন। এক বা দুই প্যারাগ্রাফে বিষয়টি ব্যাখ্যা করুন।
৬. বিদায় সম্ভাষণ: “বিনীত” বা “নিবেদক” লিখে শেষ করুন।
৭. আবেদনকারীর তথ্য: আপনার নাম, ঠিকানা এবং প্রয়োজন হলে যোগাযোগের নম্বর যোগ করুন।
দরখাস্তের কাঠামো:
- তারিখ
- প্রাপকের পদবী ও ঠিকানা
- বিষয়
- সম্ভাষণ
- মূল বক্তব্য
- বিদায় সম্ভাষণ
- আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা
দরখাস্তের প্রকার:
দরখাস্ত বিভিন্ন উদ্দেশ্যে লেখা হয়, যেমন:
- ছুটির জন্য আবেদন
- স্কুল বা অফিসে অনুপস্থিতির কারণ জানানো
- জরিমানা মওকুফের আবেদন
- উপবৃত্তি বা সরকারি সুবিধার জন্য আবেদন
- চাকরির জন্য আবেদন
সঠিক নিয়ম মেনে দরখাস্ত লিখলে আবেদনটি গ্রহণযোগ্যতা পায় এবং দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। তাই প্রতিবার দরখাস্ত লেখার সময় এই নিয়মগুলো অনুসরণ করুন।
আবেদনপত্র লেখার নিয়ম – ১
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক,
প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুল,
ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।
বিষয়: অনুপস্থিতির জন্য আবেদন।
মহোদয়,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত আমি অসুস্থতার কারণে স্কুলে উপস্থিত থাকতে পারিনি। ডাক্তারের পরামর্শে আমাকে সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হয়েছিল। এই কারণে আমি স্কুলে অনুপস্থিত ছিলাম।
আমার এই অনুপস্থিতি ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। আশা করি, আপনি আমার পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমার আবেদনটি মঞ্জুর করবেন।
বিনীত,
নিবেদক,
সঞ্জয় রায়
নবম শ্রেণি, রোল নম্বর: ১৩
প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুল, ময়মনসিংহ।
আবেদনপত্র লেখার নিয়ম – ২
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক,
প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুল,
ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।
বিষয়: জরিমানা মওকুফের জন্য আবেদন।
মহোদয়,
সবিনয়ে নিবেদন এই যে, আমি আপনার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। পারিবারিক কিছু সমস্যার কারণে আমি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেতন জমা দিতে পারিনি। এর ফলে আমার উপর জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। আমি এই বিষয়ে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আমার পরিবার বর্তমানে আর্থিক সংকটে রয়েছে, যা এই পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
অতএব, আমার এই অসুবিধার কথা বিবেচনা করে জরিমানা মওকুফ করে আমাকে সাহায্য করার জন্য আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনার সহানুভূতি ও সহযোগিতা আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
বিনীত,
নিবেদক,
সঞ্জয় রায়
নবম শ্রেণি, রোল নম্বর: ১৩
প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুল, ময়মনসিংহ।
আবেদনপত্র লেখার নিয়ম – ৩
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক,
প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুল,
ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।
বিষয়: উপবৃত্তির জন্য আবেদন।
মহোদয়,
বিনীত নিবেদন, আমি আপনার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। পড়াশোনার খরচ জোগানো আমাদের পক্ষে খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।
আমার লেখাপড়া ঠিকমতো চালিয়ে নেওয়ার জন্য আমি উপবৃত্তির আবেদন করছি। আপনার সহযোগিতা পেলে আমি আমার পড়াশোনা সফলভাবে শেষ করতে পারব। তাই, আমার আবেদনটি বিবেচনা করে উপবৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করছি।
বিনীত,
সঞ্জয় রায়
নবম শ্রেণি, রোল নম্বর: ১৩
প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুল, ময়মনসিংহ।
দরখাস্ত লেখার নিয়ম সম্পর্কে সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: দরখাস্ত কীভাবে লিখতে হয়?
উত্তর: দরখাস্ত লেখার সময় প্রথমে তারিখ লিখতে হয়। এরপর প্রাপকের নাম ও ঠিকানা, আবেদনের বিষয়, সম্ভাষণ (যেমন: মান্যবর/মহোদয়), মূল আবেদন এবং শেষে আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করতে হয়।
প্রশ্ন: আবেদনপত্র কত পৃষ্ঠার হওয়া উচিত?
উত্তর: সাধারণত দরখাস্ত এক পৃষ্ঠার মধ্যে সীমিত রাখা ভালো। তবে প্রয়োজনে আরও তথ্য যোগ করতে হলে সর্বোচ্চ দুই পৃষ্ঠা পর্যন্ত লেখা যেতে পারে।
প্রশ্ন: দরখাস্তের কয়টি অংশ থাকে এবং সেগুলো কী কী?
উত্তর: দরখাস্তের প্রধান ছয়টি অংশ থাকে। এগুলো হলো: তারিখ, প্রাপকের ঠিকানা, আবেদনের বিষয়, সম্ভাষণ, মূল আবেদন এবং আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা।
প্রশ্ন: আবেদনপত্র কী?
উত্তর: আবেদনপত্র হলো একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি, যা কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো অনুরোধ বা আবেদন জানানোর জন্য লেখা হয়। এটি সাধারণত স্কুল, কলেজ, অফিস বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে জমা দেওয়া হয়।
বন্ধুরা আশাকরি আমার দেওয়া বাংলায় আবেদনপত্র লেখার নিয়ম পড়ে আপনারা অনেকটাই দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছেন। দরখাস্ত লেখার সময় সহজ ও স্পষ্ট ভাষা ব্যবহার করা জরুরি। এতে আবেদনের বিষয়টি সঠিকভাবে বোঝা যায় এবং দ্রুত সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই ধরনের শিক্ষা বিষয়ক জানার বিষয়ক তথ্য সবার আগে পেতে আমাদের শিক্ষা নিউজের এই ক্যাটাগরি ভাল করে লক্ষ্য করতে পারেন। এছাড়া আমাদের হোয়াটসয়াপ গ্রুপে যুক্ত থেকে অন্যান্য তথ্য সবার আগে আপডেট পেতে পারবেন।