মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সমাজবদ্ধ জীব। একসঙ্গে বসবাস করা এবং পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলাই মানুষের সহজাত স্বভাব। এ কারণেই সমাজকে মানুষের জন্য একটি সুসংগঠিত কাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সমাজ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, নিয়ম-কানুন এবং সংস্কৃতির একটি সমষ্টি, যা মানুষের জীবনযাপনকে সহজ ও সুশৃঙ্খল করে তোলে। আজকের এই আলোচনায় আমরা সমাজ কী, সমাজ কাকে বলে এবং সমাজের ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। এ লেখাটি পড়ার পর সমাজ ও সামাজিকতার সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাবেন। তাই আগ্রহ থাকলে পুরো লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
সমাজ কাকে বলে ক্লাস ৩
সমাজ বলতে সাধারণত বোঝানো হয় এমন একটি গোষ্ঠী, যেখানে একাধিক ব্যক্তি একত্রে বসবাস করে এবং কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন মেনে চলে। এটি একটি সুসংগঠিত ব্যবস্থা, যেখানে মানুষ পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষা ও উন্নতির জন্য একত্রে কাজ করে।
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সমাজের মূল ভিত্তি হলো পারস্পরিক সহযোগিতা, সম্পর্ক এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন। সমাজ গড়ে ওঠে মানুষের চাহিদা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উপর নির্ভর করে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, যেখানে নতুন নতুন নিয়ম ও সংস্কৃতি সংযোজিত হয় এবং পুরনো কিছু পরিবর্তিত হয়।
সমাজ কী এবং সমাজের সংজ্ঞা
বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী সমাজকে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো।
🔹 জিসবার্গের মতে –
“সমাজ হলো সামাজিক সম্পর্কের একটি জাল, যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত থাকে।“
🔹 ওয়েস্টার্ন মার্কের মতে –
“সমাজ হলো এমন একটি গোষ্ঠী, যেখানে একদল মানুষ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জীবনযাপন করে।“
🔹 সাধারণ অর্থে –
সমাজ হলো এমন একটি কাঠামো, যেখানে মানুষ নিয়ম, সংস্কৃতি ও পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে একত্রে বসবাস করে এবং সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে সহজ করে তোলে।
সমাজের বৈশিষ্ট্য কি কি
সমাজের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা একে একটি সুশৃঙ্খল গোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। নিচে সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আপনাদে নিকট তুলে ধরা হলো।
- ✔ মানুষের সমষ্টি – সমাজ গঠিত হয় একাধিক ব্যক্তির মাধ্যমে। একজন মানুষ একা কখনোই সমাজ গঠন করতে পারে না।
- ✔ পারস্পরিক সম্পর্ক – সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তিরা একে অপরের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং একে অপরের ওপর নির্ভরশীল থাকে।
- ✔ নিয়ম ও শৃঙ্খলা – সমাজে বসবাসকারী সবাইকে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়, যাতে সমাজ সুশৃঙ্খল থাকে।
- ✔ সহযোগিতা ও সামগ্রিক উন্নয়ন – সমাজের মানুষ একে অপরের সহযোগিতা নিয়ে জীবনযাপন করে এবং সম্মিলিতভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়।
- ✔ সংস্কৃতি ও কৃষ্টি – সমাজের প্রত্যেকটি গোষ্ঠীর নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি ও রীতিনীতি থাকে, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হয়।
- ✔ পরিবর্তনশীলতা – সমাজ কখনো স্থির থাকে না, এটি পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে সাথে নতুন সংস্কৃতি, প্রযুক্তি এবং জীবনযাত্রার ধরন সমাজে প্রবেশ করে।
পরিবেশ কত প্রকার ও কি কি
সমাজ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সাধারণত সমাজকে প্রধানত তিনভাবে ভাগ করা যায়, তা নিম্নে দিয়ে দিলাম।
১. গঠনগত দিক থেকে সমাজের প্রকারভেদ
📌 সাধারণ সমাজ – যেখানে ছোট আকারের গোষ্ঠী বসবাস করে, যেমন গ্রাম সমাজ।
📌 জটিল সমাজ – যেখানে অনেক মানুষ, বিভিন্ন পেশা ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণ ঘটে, যেমন শহর সমাজ।
২. সম্পর্কের ভিত্তিতে সমাজের প্রকারভেদ
📌 প্রাথমিক সমাজ – যেখানে মানুষ আত্মীয়তা ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে যুক্ত থাকে, যেমন পরিবার।
📌 গৌণ সমাজ – যেখানে মানুষের সম্পর্ক মূলত প্রয়োজনে গড়ে ওঠে, যেমন কর্মক্ষেত্র বা ব্যবসায়িক সংগঠন।
৩. সংস্কৃতি ও জীবনধারার ভিত্তিতে সমাজের প্রকারভেদ
📌 আদিবাসী সমাজ – যেখানে মানুষ ঐতিহ্যগত উপায়ে জীবনযাপন করে।
📌 আধুনিক সমাজ – যেখানে মানুষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে জীবনযাপন করে।
আরও পড়ুন– বাংলা পাঠদানে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জানুন।
সমাজ এবং সামাজিকতা একে অপর থেকে আলাদা, তবে সমাজকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে সামাজিকতার অত্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে। মূলত সমাজ এবং সামাজিকতার মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে, যা সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের জন্য উপকারী।
সমাজ বলতে বোঝায় একটি গোষ্ঠী বা জনগণের সমষ্টি যারা নির্দিষ্ট এক জায়গায় বাস করে এবং তাদের মধ্যে কিছু সাধারণ উদ্দেশ্য, মূল্যবোধ বা নিয়ম থাকে। সমাজের ভিতরে বাস করা মানুষরা একে অপরের সঙ্গে নানা ধরনের সম্পর্ক তৈরি করে থাকে, যা তাদের জীবনকে সহজ ও সুন্দর করে তোলে।
অন্যদিকে সামাজিকতা হলো এমন একটি গুণ, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অন্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে এবং সমাজের নিয়ম-কানুন, মূল্যবোধ, ও রীতিনীতির প্রতি সম্মান দেখায়। সামাজিকতার মাধ্যমে মানুষ তার চারপাশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে পারে, যা তাকে একে অপরের সাহায্যে সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
যখন সমাজে সঠিক সামাজিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখন সমাজে শান্তি এবং সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। সঠিক সামাজিকতা মানুষকে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করে। এই সম্পর্কগুলি সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে, এবং সমাজের মানুষকে একত্রে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে।
তবে, যদি সমাজে সামাজিকতার অভাব থাকে, তাহলে সেখানে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মানুষের মধ্যে অশান্তি, দুর্ব্যবহার, এবং একে অপরকে অপমানের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এই ধরনের সমস্যা সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে, যা একে অপরের মধ্যে দূরত্ব বাড়ায় এবং সমাজের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়।
এই কারণে, সমাজ এবং সামাজিকতার সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিকতা সমাজের উন্নতির জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। এটি সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে একত্রিত করে, তাদের মধ্যে সহযোগিতা এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আমার শেষ মন্তব্য
বন্ধুরা আশাকরি আমার লেখা সমাজ কাকে বলে ক্লাস ৩ এই পোষ্টটি পড়ে আপনি আপনার জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর সহজভাবে পেয়েছেন। আরও সহজ উত্তর পেতে চাইলে আমাদের কনটাক্ট আস পেইজে কন্টাক্ট করুন। এখন, আপনি যদি সমাজ এবং সামাজিকতার গুরুত্ব বুঝে থাকেন, তাহলে আপনি নিজেও সঠিক সামাজিক আচরণে উৎসাহিত হতে পারবেন এবং সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করতে পারবেন। ধন্যবাদ, পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। আরও শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। Written By Sonjoy Roy.